আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ৪)। অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনোভাবে শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। রোজা একটি আত্মিক ও দৈহিক ইবাদত। একজন বিত্তশালী মানুষের ওপর যেমন রোজা ফরজ, একজন খেটে খাওয়া গরিব মানুষের ওপরও তেমন রোজা ফরজ। ঘরে খাবার থাকার পরও একজন ধনী রোজাদার রোজাবস্থায় কিছু খেতে পারেন না। ক্ষুধার যন্ত্রণা কী তা বাস্তবে অনুধাবনের জন্যই রমজানের রোজা সবার ওপর ফরজ করা হয়েছে।
রোজার অন্তর্নিহিত সারমর্মের একটি হলো অভাবী-গরিব মানুষের ক্ষুধার কষ্ট অনুধাবন করা। এ কষ্ট অনুধাবন করে প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের প্রতি রমজান মাসে সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রমজান শ্রমিকের প্রতি বিশেষভাবে সদয় হওয়ার মাস। তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেওয়ার মাস। তাদের প্রাপ্য মজুরির সঙ্গে একটু বাড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রতি ইহসান করার মাস। এ শিক্ষাই রমজান আমাদের দেয়।
রমজানে শ্রমিকের কাজের বোঝা বা কাজের মাত্রা অথবা পরিমাণ হালকা করার নির্দেশ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। শুধু তাই নয়, রমজানে শ্রমিকের বোঝা হালকা করে দেওয়াকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির কারণ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বা যারা রমজানে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সদয় ব্যবহার করে, তাদের কাজের বোঝা বা কাজের মাত্রা অথবা পরিমাণ হালকা করে দেয়, আল্লাহতায়ালা দয়াপরবশ হয়ে তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে তাদের রক্ষা করবেন।’ (ইবনে খুজাইমা : হাদিস নং- ২৭৯)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রমিককে ভাই স্বীকৃতি দিয়ে তার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের দাসরা (অধীনস্থ শ্রমজীবীরা) তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন, কাজেই কারও ভাই যদি তার অধীনে থাকে, তবে সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন পরিধান করায়।’ (বুখারি : হাদিস নং-২৫৪৫)।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, কিতাবুল ইমান, হাদিস নং- ১২)
শ্রমিকের মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিকেরই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মালিকানাধীন (অধীনস্থ) শ্রমিকদের জন্য খাবার ও কাপড়ের অধিকার আছে।’ (মুসলিম : হাদিস নং- ১৬৬২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর তার থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি। কেয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দেব।’ (বুখারি : হাদিস নং- ২২২৭)।