সাধারণত দাপুটে নেতাদের থামাতে কেউ যদি দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ায়, তখনই তারা পিছু হটে। ঠিক এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের সাত সপ্তাহের মধ্যে তিনি মিত্র ও প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছেন।যার মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে ‘ফাইভ আইস’ গোয়েন্দা জোট থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি অন্যতম।ট্রাম্পের এই কঠোর নীতি কানাডার জাতীয় গর্বে আঘাত হেনেছে। প্রধানমন্ত্রী মেলানি জোলি সিএনএনের ক্রিস্টিয়ান আমানপুরকে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘এটাই যথেষ্ট। কানাডিয়রা আর সহ্য করবে না। আমরা অবশ্যই আমাদের সার্বভৌমত্ব, চাকরি এবং জীবনধারা রক্ষা করব’।
কানাডার পাল্টা ব্যবস্থা
ট্রাম্পের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কানাডা আমেরিকান পণ্য বয়কট শুরু করেছে। অন্টারিওর মদ বিক্রেতারা কেন্টাকির হুইস্কি ও ক্যালিফোর্নিয়ান ওয়াইন সরিয়ে ফেলেছে। আলবার্টার প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল স্মিথ আমেরিকান মদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন।
এমন চাপের মুখে ট্রাম্প তার শুল্ক নীতি এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন এবং আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ‘আমরা কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে একটি চুক্তির চেষ্টা করছি’।
DOGE-এর চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম বড় উদ্যোগ DOGE (Department Of Government Efficiency)। যার নেতৃত্বে রয়েছেন ইলন মাস্ক। এই সংস্থাটি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল সংস্কার করতে চায়। তবে এটি এখন কঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, এমনকি প্রশাসনের ভেতর থেকেও।
এদিক ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক কাশ প্যাটেল নির্দেশ দিয়েছেন, DOGE-এর নির্দেশগুলো উপেক্ষা করতে হবে। কিছু রাজ্য এই সংস্থার তথ্য অ্যাক্সেসের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছে এবং একজন ফেডারেল বিচারক DOGE-এর সরকারি পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন।
ট্রাম্প এই অচলাবস্থা দেখে অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এখন থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে একটি পর্যালোচনা সভা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, ‘আমরা ‘হ্যাচেট’ নয়, ‘স্ক্যালপেল’ ব্যবহার করতে চাই’।
মাস্ক-ট্রাম্প সম্পর্ক কী টালমাটাল?
এই প্রথমবার ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে স্পষ্ট টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। এর আগেও কিছু অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল। যেমন- মাস্কের চার বছরের ছেলে এক্স হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেছিল। যখন তার বাবা মাস্ক ও ট্রাম্প সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।
ট্রাম্প ও মাস্ক আগে ফক্স নিউজের শন হ্যানিটিকে যৌথ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যারা আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চায়, তারা অপেশাদার’।
তবে সাম্প্রতিক পর্যালোচনা বৈঠক ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ট্রাম্পের মাস্কের ওপর অন্ধ বিশ্বাস কিছুটা কমে আসছে।
ট্রাম্পের ধৈর্যচ্যুতি?
ট্রাম্পের জন্য এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। যখন তিনি তাত্ক্ষণিক ফলাফল না পান, তখন তিনি অস্থির হয়ে ওঠেন। ফলে তিনি হয়তো এখন নতুন কোনো টার্গেট বেছে নেবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতোমধ্যে তার ক্ষোভের শিকার হয়েছেন এবং হয়তো এবার পানামা বা ভারত হতে পারে তার পরবর্তী লক্ষ্য।
ভারত এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে। তবে শুল্ক নীতির ক্ষেত্রে খুব একটা লাভ হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ভারত BRICS-এর মাধ্যমে মার্কিন ডলারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে না। কিন্তু ট্রাম্পের আচরণ অনির্দেশ্য, তাই সবসময় সতর্ক থাকা ভালো।