ভাবসম্প্রসারণ
বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
ভাবসম্প্রসারণ: স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি জাতির মাঝেই প্রবল। স্বাধীনতার প্রবল আকাঙ্ক্ষার কারণে পরাধীন জাতিগুলো যে রক্তস্রোত বইয়ে দিয়েছে তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাজয় মানতে বাধ্য হয়েছে শাসক ও শোষকদের অশুভ শক্তিবলয়। বিশ্বের মধ্যে রক্তদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ইতিহাস অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাস। বাঙালি জাতি কারও অধীনতা কোনোদিন মেনে নেয়নি। অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থান চিরকালই ছিল বজ্র কঠিন। তাই এখানে বারবার বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছে। তবুও বাঙালি হার মানেনি। কারণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ কবিতায় বলেছেন,
‘সাবাশ বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাঁতাকলে প্রায় ২০০ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছে এ জাতি। ১৯৪৭ সালে সেই জাঁতাকল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও বাঙালির মুক্তি মেলেনি। পাক হানাদার বাহিনীর এ বন্ধন বাঙালিরা মেনেও নেয়নি। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মুক্তি-সংগ্রামের দিকে। ১৯৫৮ ও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসক বাংলার দামাল ছেলেদের ওপর গুলি চালায়। গুলি করে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও। বারবার বাঙালির বুকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। তবুও তাদের স্বাধীনতার দাবিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি জান্তা বাহিনী। তাই তারা ১৯৭১ সালে বাঙালির ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানে। মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের বুকের রক্তে বাংলার মাটি লাল হয়। অবশেষে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠার পেছনে আছে অনেক বাঙালির রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। এ ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (বাংলা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা