সিলেটের দক্ষিণ সুরমার উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে সূর্যমুখী ফুলের হাসির কিরণ। ৩০ শতক জায়গায় ফুটে ওঠা এই সোনালি ফুলগুলো যেন এক টুকরো হলুদ চাদর বিছিয়ে দিয়েছে মাটির ওপর। ফাগুনের মৃদু বাতাস আর সূর্যের আলোতে দুলে ওঠা সূর্যমুখী দেখলে যে কারও মনোরঞ্জন হবে। উপজেলা পরিষদে আসা প্রতিটি মানুষকে মুগ্ধ করে এই ফুলের সৌন্দর্য।প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসার গৌতম পাল। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের প্রশংসা এখন সর্বত্র। দীর্ঘদিন ধরে পতিত থাকা উপজেলা পরিষদের ভেতরের জায়গা এবার হয়ে উঠেছে এক অদ্ভুত ফুলের বাগান। এই উদ্যোগটি শুধু সৌন্দর্যই নয়, কৃষির প্রতি আগ্রহও সৃষ্টি করছে।
জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসার গৌতম পাল তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এই চাষ শুরু করেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায়, কৃষক আব্দুস শহিদকে দায়িত্ব দিয়ে ৩০ শতক জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করা হয়।
এখন এই সূর্যমুখী বাগান হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যপ্রেমীদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন শ শ মানুষ এখানে আসেন, ছবি তোলেন এবং ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ কেউ নিজের বাগানেও সূর্যমুখী চাষ করার ইচ্ছা পোষণ করছেন।
একজন সৌন্দর্যপ্রেমী নুরুননাহার আক্তার বলেন, ‘ফুল আমার খুব ভালো লাগে। উপজেলায় এসেছিলাম একটি কাজে। এখানে এসে দেখলাম বিশাল সূর্যমুখীর বাগান। বাগানটি দেখে খুব খুশি হলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাগান করি, অনেক ছবি তুলেছি সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে।’
সাংবাদিক এস এ শফি বলেন, ‘উপজেলা অফিসে একটি কাজের জন্য গিয়েছিলাম। তখন দেখি বিশাল সূর্যমুখীর বাগান। পরে জানতে পারি, এটি কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে হয়েছে। সরকারি অফিসের সামনে এমন একটি বাগান সত্যিই ব্যতিক্রমী। এটি সাধারণ মানুষকে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী করবে।’
গৌতম পাল বলেন ‘এখন অনেক মানুষ এখানে আসে, ছবি তোলে, পরামর্শ নেয়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়িতে সূর্যমুখী চারা নিতে চায়। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিতে আমরা সব সময় তাদের প্রণোদনা দিই। এখানকার জমি সূর্যমুখী চাষের জন্য খুব উপযোগী।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা চারা নিতে চায়। সূর্যমুখী তেলের চাহিদা অনেক। যেটা হার্টের জন্যও উপকারী। তেলের উৎপাদন বাড়ালে কৃষকরা লাভবান হবে। মানুষও স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাবে।’ তিনি আরও জানান, এই ধরনের আবাদে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখী তেলে লিনোলিক অ্যাসিড থাকে। যেটা হার্টের জন্য ভালো। তা ছাড়া কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।’ সরকার অনাবাদী জমি আবাদ করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে। গৌতম পাল বলেন, ‘সরকারের লক্ষ্য হলো, অনাবাদী জমি আবাদের আওতায় আনা, যাতে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্য সংকট কমে।’ তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।’