ফুলের সৌন্দর্য আর ফলের তাজা রঙ মানুষের মন ভালো করে দেয়। তবে এসব বিক্রি করেই সংসার চালান মো. ইমন মিয়া। অভাবের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে নার্সারি ব্যবসাকে জীবনের সঙ্গী করেছেন তিনি। দাউদকান্দি পৌরসভার শহীদ রিফাত শিশু পার্কের সামনে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে চারা বিক্রি করছেন ইমন।
ইমন জন্মসূত্রে দাউদকান্দি পৌরসভার উত্তর গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তবে ছোটবেলা কেটেছে মতলব উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের মামার বাড়িতে। সেখানকার বাগানবাড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন। কিন্তু বাবার অসুস্থতা এবং সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।
ইমন জানান, ‘বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয় আমাকে। আমাদের পৈতৃক ব্যবসা ছিল নার্সারি। বাড়িতে বিভিন্ন চারা তৈরি করে সপ্তাহে দুই দিন অটোরিকশায় করে বাজারে এনে বিক্রি করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার চারা বাজারে নিয়ে আসি। এতে মাসে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। খরচ বাদে লাভ থাকে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে।’
চারা বিক্রির পাশাপাশি ইমন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তবে ব্যবসার দায়িত্ব তিনি ছাড়তে পারেননি। নার্সারি ব্যবসা ও চাকরি দুই মিলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
ইমনের বাবা মো. মিজান মিয়া বলেন, ‘আমি অসুস্থ হওয়ার পর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু আমার ছেলে পরিশ্রম করে সংসারটি সচ্ছল করেছে। এখন আর কোনো অভাব নেই। কিছু সঞ্চয়ও হয়েছে।’
গাজীপুর গ্রামের শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইমন খুব ভালো ছেলে। একসময় অনেক কষ্টে ছিল তার পরিবার। কিন্তু নিজের চেষ্টায় সে এখন স্বাবলম্বী। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি, এটা দুঃখের বিষয়। আমি তাকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ব্যবসার পাশাপাশি পড়াশোনা করলে সে আরও ভালো করতে পারবে।’
উপজেলা উপ-কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘ইমন একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী। তার কাছে প্রচুর ফল, ফুল ও ঔষধিগাছের চারা পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে পরামর্শ নিতে আসে। কৃষি অফিস থেকে তাকে সহায়তা করি এবং ভবিষ্যতেও করব।’
ইমনের কাছ থেকে চারা কিনতে আসা ডাক্তার সাইফুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ফুল ও ফলগাছ বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায়। ইমনের কাছ থেকে চারা কিনছি কারণ ওর চারাগুলো ভালো এবং দামও কম।’
পরিশ্রম আর মেধা থাকলে জীবনে সফল হওয়া যায়। ইমন তার বাস্তব উদাহরণ। সংসারের দায়িত্ব নিতে পড়াশোনা ছেড়েছেন। তবে স্বপ্ন দেখেন আরও বড় কিছু করার। হয়তো একদিন তিনি পড়াশোনা শেষ করেও স্বপ্ন পূরণ করবেন।