মেট্রোরেলে মিরপুর ১১ স্টেশনে নেমে একটু সামনে এগিয়ে হাতের বাঁয়ে হাঁটলেই নান্নু মার্কেট। ছেলেদের পোশাকের জন্য বেশ জনপ্রিয় এই মার্কেট। মিরপুর তো বটেই, মিরপুরের বাইরে থেকেও বাজেটে মধ্যে বাজার করতে এখানে আসেন ক্রেতারা।নান্নু মার্কেটে পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা করছেন আলবীর হোসেন। জানালেন, ‘মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এখানকার মার্কেটগুলো বেশ জমে উঠেছে। জ্যাম পেরিয়ে ভিড় ঠেলে নিউমার্কেটে বাজার করার চেয়ে লোকজন নান্নু মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোয় কেনাকাটার কাজটা সেরে নিচ্ছেন।’ মার্কেট ঘুরে তাঁর কথার সত্যতা মিলল। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটায় বেশ জমজমাট এই এলাকা। অন্যান্য যেকোনো মার্কেটের চেয়ে অনেক কম দামে এখানে পোশাক কেনার সুযোগ মেলে।
যদিও নান্নু মার্কেটে ছেলেদের পোশাকের আধিক্যই বেশি, তবে পাশের মোহাম্মদীয়া মার্কেটে নিউমার্কেট, হকার্স ও চাদনী চকের মতো মিলবে সব ধরনের অনুষঙ্গ ও পোশাক। তবে দামটা এখানে অনেক কম। সর্বোচ্চ ২০০০ টাকার মধ্যে পছন্দের শাড়িটি কিনতে পারবেন। ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে সেলাই ছাড়া জমকালো কাজের থ্রিপিস পাওয়া যাবে। রয়েছে ছোটদের পোশাকের বিশাল সম্ভার। হাজার টাকায় লেহেঙ্গা, ফ্রক, টপ, প্যান্টের মতো ফ্যাশনেবল পোশাকও পাওয়া যাবে।পল্লবীর বাসিন্দা সাইফা সিদ্দিকী নিজেই একজন পোশাক ব্যবসায়ী। পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে পোশাকের দোকান আছে। তবে নান্নু মার্কেটে সাইফা সিদ্দিকী আজ নিজেই ক্রেতা। সুমনা ফ্যাশনের দোকান থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য একই নকশার চারটা শার্ট নিলেন। জানালেন, ছেলেদের পোশাক কেনার জন্য সব সময় নান্নু মার্কেটের ওপর নির্ভর করেন।শ্যামলী থেকে শাড়ি কিনতে এসেছেন প্রিয়তা খন্দকার। জানালেন, পছন্দসই শাড়ি বেশ কম দামে এই মোহাম্মদীয়া মার্কেট থেকে কেনা যায়।
আড়ংয়ের মার্কেট নামে পরিচিত মিরপুর ১১–এর দেলোয়ার মার্কেট। বলা হয়ে থাকে, এখানে আড়ংয়ের মানের গজ কাপড় পাওয়া যায়। পাবেন দেশীয় কাপড়ে তৈরি মেয়েদের ওয়ান পিস। দোকানিরা জানালেন, শুধু খুচরা ক্রেতাই না, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও এখান থেকে কাপড় নিয়ে পোশাক তৈরি করে বিক্রি করেন। অল্প কিছু দোকান, তবে রুচিসম্পন্ন ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ল বেশ।নান্নু মার্কেটে চাহিদার শীর্ষে থাকা টি–শার্টের দাম ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা। শার্ট ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা, হাফহাতা শার্ট ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, ফরমাল প্যান্ট ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট ৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ট্রাউজার ৩০০ টাকা, ব্লেজার ১২০০ টাকা।মোহাম্মদীয়া মার্কেটে সুতির শাড়ির সর্বোচ্চ দাম ৮০০ টাকা, সফট সিল্ক ২০০০ টাকা। ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার ভেতর মিলবে শিশুদের পোশাক। টু–পিস, থ্রি–পিসের দাম ৫৫০ টাকা থেকে হাজার টাকা।দেলোয়ার মার্কেট থেকে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় গজ কাপড় কিনে পছন্দের পোশাকটি বানিয়েও নিতে পারবেন। এখানে ব্র্যান্ড ঘরানার সিঙ্গেল কামিজের দাম পড়বে ৭০০ টাকা।মার্কেটগুলোর আশপাশের গলির দুপাশজুড়ে সারি সারি পোশাক ফিটিংয়ের দোকান। যেখান থেকে পছন্দের পোশাকটি ফিটিং করে নিতে পারেন। মাগুরা টেইলার্স কাটিং ও ফিটিংয়ের কাটিং মাস্টার ফিরোজ আলমকে প্রশ্ন করলাম, আপনার বাড়ি নিশ্চয়ই মাগুরা? হাসিমুখে উত্তর এল, না না। আমার বাড়ি ফরিদপুর। কিন্তু যাঁর থেকে দোকান নেওয়া, তাঁর বাড়ি মাগুরা। দোকানটাও তাই সেই নামেই চলছে। এখানে শার্ট, প্যান্ট, পায়জামা, পাঞ্জাবি, জ্যাকেট, ব্লেজার—সবই ফিটিং করা হয়।
রেডিমেড কেনা ঢিলেঢালা পোশাক শরীরের মাপমতো কারিগরের দক্ষ হাতে ফিটিং করিয়ে নিতে অনেকেই এখানে আসেন। মিরপুর থেকে শুরু করে ফার্মগেট, গুলিস্তান এমনকি টঙ্গী, গাজীপুর থেকেও লোক আসে। পাঞ্জাবি ফিটিং করতে ৩০০ ফিট থেকে যেমন এসেছেন জাহিদ হাসান। আগেও এখানে অনেক কাজ করিয়ে নিয়েছেন। কাজের মান ভালো হওয়ায় এখন নিয়মিতই আসেন।ফিরোজ আলম জানান, পাঞ্জাবি মেরামতে এখানে খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, কাজের পরিধিভেদে শার্ট ফিটিং ৪০ থেকে ১৫০ টাকা। ফরমাল প্যান্ট ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, জ্যাকেট ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা আর ব্লেজার ফিটিংয়ে খরচ হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। ফলে পছন্দ করে কিনে ফেলা পোশাক ফিটিং না হলেও এখানের দক্ষ কারিগরের সাহায্যে সহজেই ফিটিং করে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।