কয়েক বছর আগেও দেশের তরুণ সমাজ ভালো কোনো চাকরি করাকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে গণ্য করত। দেশের শ্রমবাজার টালমাটাল থাকায় ও কর্মসংস্থানের অভাবে অনেককে দিনের পর দিন বেকার থাকতে হতো, যা তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের তরুণদের মধ্যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে এবং তারা শুধু চাকরির পিছে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। অনেকে তো চাকরির পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের পথ হিসেবে ছোটখাটো ব্যবসা করছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী ধারণা ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি দেশের বিভিন্ন খাতে তাদের প্রতিভার পরিচয় দিচ্ছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরুণদের অনেকেই আগে ব্যবসার জন্য পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ জন্য বিভিন্ন সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেককে। তবে এ সময়ের তরুণরা ব্যাংক লোন, বিভিন্ন উদ্যোক্তা স্কিমের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এসব ব্যাপারে যথাযথ ধারণা নিচ্ছে এবং সুবিধামতো সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসা শুরু করছে।
তরুণ সমাজের আগ্রহ ও প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে দেশের ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে শুধু সহজই করেনি, সবার হাতের নাগালেও এনে দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট সমাধান ও বাড়তি ঝামেলামুক্ত ঋণ সুবিধা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে ও ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে সাহায্য করছে।
শুধু ঋণসেবা নয়, তরুণরা এফডি ও ডিপিএসের ক্ষেত্রেও আগ্রহী হচ্ছে। তাদের এই সঞ্চয়ী মনোভাব জীবনের কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সাহায্য তো করছেই, পাশাপাশি তাদের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে। শুরু থেকেই সঞ্চয়ী হয়ে ওঠার চেষ্টা তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতের সম্ভাবনা আরও সহজ করছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উদ্ভাবনে উৎসাহ প্রদান এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বনির্ভরতা ও উদ্যোক্তা তৈরির পথ প্রশস্ত করছে। তরুণদের উদ্যোগী মনোভাব এসএমই খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যারা একসময় সীমিত মূলধন বা বিনিয়োগের কারণে পিছিয়ে ছিল, তারা এখন ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে এবং নিজ জীবনমান উন্নত করছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম শীর্ষ নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান দাউদ সামস বলেন, ‘আমরা আগে দেখতাম বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য তরুণ উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করে কর্মসংস্থানের অন্বেষণে ঘুরে বেড়াত। তাদের বড় একটি অংশ চাহিদা মতো চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগত। আজ সেই হতাশা কাটিয়ে দেশের তরুণ সমাজ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আমরা সেই চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তাদের উৎসাহ দিতে সহজ ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেশন চালু করেছি।’
তিনি বলেন, “দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান প্ল্যাটফর্ম ‘আইপিডিসি জয়ী’ দেশব্যাপী অগণিত নারীর জীবন পরিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে। এমনকি আমাদের একটি উপশাখা রয়েছে ‘জয়ী ৩৬০’ নামে, যা নারী উদ্যোক্তাদের লোন প্রদান থেকে শুরু করে ট্রেনিং, ওয়ার্কশপসহ তাদের ব্যবসায়িক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণের যাবতীয় সুবিধাসহ নারী উদ্যোক্তাদের জন্যই নিবেদিত।”
আইপিডিসির মতো প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তা লোন সুবিধার পাশাপাশি কর্মজীবনের শুরু থেকেই সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে অপেক্ষাকৃত তরুণ পেশাজীবীদের জন্য বিভিন্ন ডিপোজিট স্কিমও রয়েছে। তরুণদের সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে তাদের মধ্যে গঠনমূলক আর্থিক পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল আচরণের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ গ্রহণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিক্ষা ও পরামর্শ প্রদানকারী প্রোগ্রামগুলো আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার পাশাপাশি স্থায়ী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে।