বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তের দেড় মাস পরও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯তম সিন্ডিকেট সভায় (২০ জানুয়ারি) আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৭১ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ২৩ জনকে এক সেমিস্টার, ৩৩ জনকে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার এবং ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই ১৫ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযুক্তদের তালিকা
যেসব ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তাদের মধ্যে রয়েছেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, ধনঞ্জয় কুমার টগর, ফজলে রাব্বি (গ্লোরিয়াস), দফতর সম্পাদক বাবুল, সহ-সভাপতি তানভীর ও আরিফুজ্জামান বিধান, আব্দুল্লাহ আল নোমান খান, রিফাত, ফারহাদ হোসেন এলিট, মোমিনুল, আরিফুজ্জামান ইমন, গাজীউর, শাহিদ হাসান ও মামুন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়া শাস্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের জন্যও স্থায়ী বহিষ্কার হয়ে থাকে, সেখানে হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য এত কম শাস্তি মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা এখনও বহিষ্কার কিংবা আইনের আওতায় আসেননি, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
সাক্ষীর তালিকা প্রস্তুত, দ্রুত আইনি ব্যবস্থা দাবি
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা নিজেরাই সাক্ষ্য দেবেন এবং দ্রুত প্রশাসনের কাছে সাক্ষীর তালিকা জমা দেবেন। আবু সাঈদের সহযোদ্ধা এসএম আশিকুর রহমান বলেন, “আমরা অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে নিজেদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করব।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, “আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। এর পরও উত্তর না পেলে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। ১৫ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী জানান, “অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা হবে। যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে জড়িত, তারা কেউই পার পাবে না।”
ঘটনার পটভূমি
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বেরোবি ক্যাম্পাসের সামনে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। তিনি প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বুক পেতে দেন, আর তখনই তাকে গুলি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে, যা দোষীদের আশকারা দেওয়ার শামিল।